কি? একা একা ট্রেক করবে? এই ১০টা পয়েন্ট কিন্তু অবশ্যই মাথায় রাখো!
আমরা অনেকেই আছি যারা দুই-একটা গ্রুপ ট্রেক করার পরেই সোলো ট্রেক মানে একা ঘুরতে যেতে ভালবাসি। কারনটা খুবই সহজ, বন্ধুদের সবার সবসময় সময় হয়ে ওঠে না।
এই সোলো ট্রেক করতে কিছু খুব দরকারি পয়েন্ট মাথায় রাখতে হয়। যে যতবড়ই ট্রেকার হয়ে থাকুক, কেউ কখনই হলফ করে বলতে পারবেনা যে ট্রেকে গিয়ে সে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখিন হবেইনা। তাই সবরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য তৈরি থাকাটা অবশ্যই দরকার। সে কেউ সোলো ট্রেক করতে যাচ্ছ বা গাইড ছাড়া অজানা রুটে ট্রেক করার প্ল্যান করছ, সবার জন্যই বলছি।
ট্রেকে বেরোনোর আগে এই ১০টা জিনিসের ব্যবস্থা আছে কি অবশ্যই চেক্ করে নেবে!
১) নেভিগেশান টুল বা দিক নির্ণয়ের উপায়
২) ফায়ার মেকিং বা আগুন জালানোর ব্যবস্থা
৩) সান প্রটেকশন
৪) ইন্সুলেশন বা পোশাক
৫) ইলুমিনেশন বা আলোর ব্যবস্থা
৬) ফাস্টএড
৭) রিপেয়ার টুলস্
৮) নিউট্রেশন বা খাওয়ার
৯) হাইড্রেশন বা জলের ব্যবস্থা
১০) এমারজেন্সি ক্যাম্পিং
১) প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক ন্যাভিগেশন টুলস্ বা দিকনির্ণয়ের বিভিন্ন উপায় কি কি আছে-
ট্রেকিং-এ এমন নয় যে হাই রোডের মতো ১ কিলমিটার ছাড়া কোন দিকে যেতে হবে তার নির্দেশ দেওয়া থাকবে। খুব ভাগ্যবান হলে কোথাও কোথাও ট্র্যাক সাইন পেয়েও যেতে পারো। তবুও সেটা চেনার উপায় জেনে নিজেকেই ঠিক করতে হয়। তাই আগে থেকে তৈরি হয়ে নিতে হয়।
১) ক) টপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ -
যদি অজানা পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেক করতে যাও তাহলে একটা টপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ অবশ্যই কাছে রাখো। টপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ সাধারন ম্যাপের থেকে একটু আলাদা হয়। এই ম্যাপে কন্টুর লাইন দিয়ে বিস্তৃত ভাবে ভুমির আকৃতি চিহ্নত করা থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে বা মানুষের তৈরি সব ভুমির রুপের আকৃতি অনুযায়ী কন্টুর লাইন এই ম্যাপে উল্লেখ থাকে।
ম্যাপ নেওয়ার সময় যেকোনও ওয়াটারপ্রুফ মেটেরিয়ালের মধ্যে ভরে ক্যারি করতে ভুলো না।
১) খ) কম্পাস -
সোলো ট্রেকিং যারা করতে চাও তাদের বলব, তোমরা অবশ্যই কম্পাসের সাথে ম্যাপ পড়ার ব্যবহার করা শেখো। কোনও অজানা জায়গায় হারিয়ে গেলে এই ম্যাপ এবং কম্পাসের ব্যাক বেয়ারিং-এর সাহায্যে নিজের অবস্থান জানতে পারবে।
তাই বলে মোবাইলের কম্পাস নয়। মনে রেখো জি পি এস, গুগল ম্যাপ বা এই ধরনের কোনও ইলেক্ট্রনিক জিনিস কিন্তু সব পরিস্থিতিতে কাজ করে না।
আর একটা ছোট্ট কম্পাস ব্যাগের মধ্যে বেশি জায়াগাও নেয় না। ব্যবহার করার জন্য ব্যাটারিও লাগে না। জিপিএস -এর তুলনায় অনেক হালকা হয়ে থাকে।
১) গ) জি পি এস -
কম্পাসের ব্যবহার করতে পারো বলে যে জি.পি.এসের ব্যবহার করবেনা তা নয়। কম্পাস এবং ম্যাপের মাধ্যমে আমাদের অবস্থান মোটামুটি বুঝে নিতে পারি ঠিকই। কিন্তু জিপিএস-এর মাধ্যমে একদম পয়েন্ট আউট করে দেখে নেওয়া যায় আমরা ঠিক কথায় আছি। এবং সেটা ব্যাক বেয়ারিং-এর হিসেব নিকেশ করতে যে সময় লাগে, তার থেকে অনেক তাড়াতাড়ি জানা যায়।
একটা জি পি এস ডিভাইস অনেক বেশি শক্তপোক্ত হয়। যদি কেউ ব্যবহার করো তাহলে এটার জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত ব্যাটারি ক্যারি করবে।
যদিও জিপিএস ব্যবহার সামান্য ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সিগন্যালের সমস্যাও দেখা যায়।
১) ঘ) পি এল বি -
পি.এল.বি বা পার্সোনাল লোকেটর বিকন্ এটা অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র, যেটা খুব এমারজেন্সি পরিস্থিতির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ধরো তুমি এমন কোথাও ফেঁসে গেছ যেখান থেকে তোমাকে উদ্ধার করার জন্য অন্য কারুর সাহায্য লাগবে। যেমন অচেনা অজানা প্রত্যন্ত জায়গা, তুষারের নিচে বা গ্লেসিয়ারের নিচে এমন জায়গায়। যেখানে তোমার মোবাইল ফোন কাজ করে না সেখানেও এই যন্ত্র কাজ করতে সক্ষম হয়।
সেই সময় যদি তোমার পি.এল.বি সিগন্যাল অন করে দাও তখন তোমার সঠিক অবস্থান বা লোকেশন তোমার রেস্কিউ টিমের কাছে চলে যাবে।
এই পি.এল.বি উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের সাথে যুক্ত থাকে। যেটা কোনও সরকারী বা কোনও বেসরকারি উদ্ধারদলকে পি এল বি এর লোকেশনের সিগন্যাল পাঠাতে থাকে।
২) ফায়ার বা আগুনের ব্যবস্থা -
যদি সোলো ট্রেক করো তাহলে অবশ্যই নিজে আগুন তৈরি করার পদ্ধতি জেনে রাখতে হবে। কোন কোন জিনিস ব্যবহার করলে আগুন সহজে এবং তাড়াতাড়ি ধরানো সম্ভব সেই সম্বন্ধে জেনে রাখা দরকার।
গ্রাফাইটের ফায়ার-স্টার্টার, বুটেন স্টোভ বা বুটেন লাইটার, দেশলাই এগুলো ব্যাবহার করা যেতে পারে। যদি সম্ভব হয় ছোট্ট কেরোসিনের স্টোভ ও ক্যারি করা যেতে পারে।
ট্রেকে গিয়ে যেখানে ক্যাম্প করবে আসে পাশে শুকনো কাঠ বা গাছের ডাল-পালা, খড় এবং পাতার মতো দাহ্য বস্তু পাওয়া গেলে আরও ভালো।
লোকাল লাইটার নিয়ে যাবে না। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু এলাকায় বায়ুর চাপের তারতম্যের ফলে লাইটার ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।